চাকরি, শিক্ষানবিশি, বৃত্তির আবেদনসহ নানা প্রয়োজনে আমাদের সিভি (কারিকুলাম ভিটা বা জীবনবৃত্তান্ত) তৈরি করতে হয়। যেখানে আমরা আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতাসহ নানা বিষয় তুলে ধরি। ঝোলায় যখন নানা অভিজ্ঞতা যোগ হয়ে যায়, তখন সিভিতে লেখার উপকরণ পাওয়া যায় ঢের। কিন্তু একদম প্রথম সিভিতে আমরা কী লিখব? তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, প্রথম সিভিটা কখন তৈরি করব? বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে চাকরির আবেদনের আগেই কি শুধু সিভি তৈরির প্রয়োজনীয়তা টের পাওয়া যায়? নাকি আরও আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার? এসব প্রসঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক হামিদা মোশাররফের সঙ্গে। প্রথম সিভি তৈরির কার্যকর কিছু কৌশল জানালেন তিনি।
প্রথম সিভি কখন তৈরি করব
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই সিভি তৈরির কৌশলগুলো আয়ত্ত করা উচিত। নিজের সিভি নিজেকেই তৈরি করা জানতে হবে। সিভি তৈরি একটি দক্ষতা। অন্য কেউ সিভি তৈরি করে দিলে হয়তো পরে চাকরিজীবনে আপনি সেই দক্ষতা আর অর্জন করতে পারবেন না। প্রশ্ন আসতে পারে—বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরুতেই তো আমি চাকরির আবেদন করতে যাচ্ছি না, তাহলে কেন সিভি তৈরি রাখব। চাকরি ছাড়াও কিন্তু অনেক রকম সুযোগ আপনার সামনে আসতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্মেলন, কর্মশালা, নানা ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে সিভি দরকার হয়। তা ছাড়া খণ্ডকালীন চাকরির কোনো সুযোগও হঠাৎ তৈরি হয়ে যেতে পারে। তাই প্রথম বর্ষ থেকেই এসব বিষয়ে ভাবতে হবে। যুক্ত হয়ে যান কোনো না কোনো ক্লাবের সঙ্গে। তাহলে সিভিতে লেখার অনুষঙ্গ পাবেন। জীবনের প্রথম সিভিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়গুলো যেমন উল্লেখ করতে হবে, তেমনি নিজের আগ্রহ, শখ কিংবা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের কথাও লিখুন। ভাষাগত দক্ষতা হিসেবে ইংরেজি ও মাতৃভাষায় কতটা পারদর্শী, তা যুক্ত করুন। যখন দ্বিতীয় বর্ষ থেকে আরও সামনের দিকে এগোবেন, তখন বিভিন্ন কারিগরি কোর্স (যেমন রিসার্চ মেথোডলজি, বিজনেস কমিউনিকেশন), সফটওয়্যারের দক্ষতা (ফটোশপ, এমএস ওয়ার্ড, এমএস এক্সেল) যুক্ত করার সুযোগ তৈরি হবে।
সব সিভি এক নয়
ধরুন, আপনি কোথাও ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করবেন। কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করতে চান। দুটো সিভি কিন্তু এক হবে না। প্রয়োজন অনুসারে সিভি সাজাতে হবে। কাজের জন্য যেসব সিভি জমা দেবেন, সেখানে আপনি কী কী কাজ জানেন, কোন কোন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। কম্পিউটার বা ভাষা দক্ষতার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। অন্যদিকে, গবেষণা সহকারী হিসেবে কোথাও যুক্ত হতে চাইলে গবেষণাসংশ্লিষ্ট ক্লাসওয়ার্ক, ফিল্ডওয়ার্ক, অভিজ্ঞতার কথা লিখতে হবে। আবার ধরুন কোথাও অনুবাদক হিসেবে কাজের সুযোগ এল। সেখানে লিখতে হবে ভাষাসংশ্লিষ্ট যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার কথা। প্রতিষ্ঠানভেদে নানা ধরনের সিভি গ্রহণ করা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান সিভির একটা ড্রাফট বা টেমপ্লেট দিয়ে দেয়, কারও ক্ষেত্রে ফরম পূরণ করতে হয়। প্রতিটা সিভির জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী আলাদাভাবে নিজেকে তুলে ধরতে হবে। লিংকডইন থেকে সিভি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। এ ছাড়া আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছেও সহযোগিতা চাইতে পারেন।
যে ফরম্যাট ব্যবহার করব
সিভি বা জীবনবৃত্তান্তের কোনো বৈশ্বিক ফরম্যাট নেই। প্রয়োজন বুঝে, যেখানে আবেদন করবেন, তার ওপর নির্ভর করে সিভি তৈরি করতে হয়। সাধারণত ২ থেকে ৪ পৃষ্ঠার (২ পাতা) সিভি আদর্শ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আপনার বয়স ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে সিভি তৈরি করতে হবে। অন্যের সিভি অনুকরণ করা যাবে না। তবে ধারণা নেওয়ার জন্য অনলাইনে অসংখ্য সিভির ফরম্যাট পেয়ে যাবেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস অব ক্যারিয়ার সার্ভিসেসের একটি সাধারণ সিভি ও কভার লেটার তৈরির ফরম্যাট আছে। শুরুতে আপনি এই পদ্ধতিতে সিভি তৈরি করতে পারেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা এখানে। এ ছাড়া অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভি তৈরির কিছু প্রাথমিক নিয়ম আছে, সেগুলোও দেখতে পারেন এই লিংকে।
সিভিতে যা সংযুক্তির প্রয়োজন নেই
আমরা সিভিতে অসংখ্য লেখা ও তথ্য যুক্ত করতে চাই। কোনো কাজে মনোনীত হওয়া বা চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য নির্বাচিত হওয়াই যেহেতু সিভির প্রাথমিক লক্ষ্য, তাই সবকিছুর বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন নেই। ব্যক্তি হিসেবে আপনার সামগ্রিক তথ্যের সংক্ষিপ্তসারই সিভিতে যুক্ত করতে হবে।
প্রথম সিভিতে যা যা থাকবে
একজন শিক্ষার্থী জীবনের প্রথম সিভিতে নিচের তথ্যগুলো যুক্ত করতে পারেন।
- ব্যক্তিগত তথ্য: আপনার সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা, ই–মেইল ঠিকানা, মুঠোফন নম্বর থাকা জরুরি।কোন কোন পাবলিক পরীক্ষায় আপনি অংশ নিয়েছেন, তার সংক্ষিপ্ত তথ্য দিতে পারেন। এখন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে, যে বিভাগে, যে পর্যায়ে পড়ছেন তার তথ্য দিন।
- অভিজ্ঞতা: এ বিষয়টি সিভির মূল বিষয়। এ ক্ষেত্রে আপনার কোনো কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে লিখুন। কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ক্লাব বা সংগঠনে যুক্ত আছেন, তার কথা লিখুন। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কোনো অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকলে তা-ও লিখতে পারেন।
- দক্ষতা: সাধারণভাবে ভাষাগত দক্ষতা ও কম্পিউটারসংক্রান্ত দক্ষতাগুলো লিখতে হবে। এ ছাড়া সৃজনশীল কোনো কাজে যদি আপনার দখল থাকে, যেমন আবৃত্তি, গান, কিংবা খেলাধুলা, সিভির ধরন অনুযায়ী সেসবও লিখতে পারেন।
- আগ্রহ ও অর্জন: মানুষ হিসেবে কোন কাজে আপনার আগ্রহ আছে, আপনার শখ কী—এসব লিখতে হবে। শিক্ষাজীবনে কোনো অর্জন বা কোনো প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়ে থাকলে সেটিও লিখুন।
- রেফারেন্স: আপনাকে চেনেন ও জানেন, এমন পেশাদার ব্যক্তির তথ্য রেফারেন্স হিসেবে লিখুন। কোনো রেফারেন্স না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে তাঁর নাম ও ফোন নম্বর যোগ করতে পারেন।
আমাদের সাইটে ক্যারিয়ার টিপস নিয়ে অন্যান্য আর্টিকেল দেখুন এখানে