একজন অডিটর হয়ে উঠতে আপনার প্রয়োজনীয় গাইডলাইন

NT 59K287

একজন অডিটর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আর্থিক দলিলপত্র বিশ্লেষণ করে, ত্রুটি বা প্রতারণা শনাক্ত করে এবং নির্দিষ্ট নিয়মাবলী মেনে চলার নিশ্চয়তা প্রদান করে। 

অডিটিং পেশা বর্তমান বিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানজনক একটি পেশা। যেকোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যক্রম এবং নিয়ম মেনে চলার নিশ্চিতকরণের জন্য একজন দক্ষ অডিটরের ভূমিকা অপরিহার্য। অডিটিং মূলত নিরীক্ষণের কাজ, যেখানে বিভিন্ন আর্থিক এবং কার্যকরী দিকগুলি যাচাই-বাছাই করা হয়। অডিটিং পেশার মাধ্যমে শুধুমাত্র আর্থিক দুর্নীতিই কমানো সম্ভব হয় না, পাশাপাশি এটি কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলাও নিশ্চিত করে। একজন অডিটর কীভাবে হয়ে উঠবেন, তার জন্য কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন, প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও দক্ষতা, এবং অডিটিং পেশার সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

অডিটিং পেশার প্রয়োজনীয়তা

অডিটিং কেবলমাত্র কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অডিটিং পেশার প্রয়োজনীয়তা একাধিক কারণে বাড়ছে। এর মধ্যে আর্থিক প্রতারণা রোধ, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, এবং কর্পোরেট জবাবদিহিতার পরিসর বৃদ্ধি করা অন্যতম। বিশেষ করে বড় সংস্থাগুলোর জন্য আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখা অডিটিংয়ের একটি মৌলিক উদ্দেশ্য।

একজন অডিটর হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা

১. শিক্ষাগত যোগ্যতা

অডিটর হওয়ার জন্য সর্বপ্রথমে প্রয়োজন সঠিক শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করা। সাধারণত হিসাবরক্ষণ বা অ্যাকাউন্টিং বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি (B.Com) একজন অডিটরের জন্য প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ফাইন্যান্স বা বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনেও ডিগ্রি অর্জন করা যেতে পারে। স্নাতক পর্যায়ে অ্যাকাউন্টিং এবং অডিটিং-এর ওপর ভিত্তিমূলক ধারণা পাওয়া যায়, যা অডিটিং পেশায় প্রবেশের প্রথম ধাপ।

২. পেশাগত সার্টিফিকেশন

শুধু স্নাতক ডিগ্রির মাধ্যমে একজন সফল অডিটর হওয়া সম্ভব নয়; এর জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং সার্টিফিকেশন প্রয়োজন। কিছু জনপ্রিয় সার্টিফিকেশন এর মধ্যে রয়েছে:

  • সিএ (Chartered Accountant): একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হওয়ার জন্য বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে প্রফেশনাল কোর্স, নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজের অভিজ্ঞতা এবং চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
  • ACCA (Association of Chartered Certified Accountants): এটি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোর্স, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অডিটর হিসেবে কাজ করার সুযোগ প্রদান করে।
  • CIA (Certified Internal Auditor): অভ্যন্তরীণ অডিটিংয়ের ক্ষেত্রে এই সার্টিফিকেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. কাজের অভিজ্ঞতা

অডিটিংয়ের ক্ষেত্রে তত্ত্বগত জ্ঞান ছাড়াও কাজের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন অডিটিং ফার্মে ইন্টার্নশিপ করার মাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করা যেতে পারে। এই ইন্টার্নশিপের সময় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাস্তবসম্মত পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়, যা পরবর্তী পেশাগত জীবনে অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে।

অডিটরদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা

অডিটিং পেশায় সফল হতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে:

১. বিশ্লেষণী দক্ষতা

অডিটিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি নথি এবং রিপোর্ট বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন হয়। অডিটরদের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করার এবং তাতে কোন ভুল বা অসঙ্গতি আছে কিনা তা শনাক্ত করার ক্ষমতা থাকতে হবে।

২. আইনি জ্ঞান

অডিটরদেরকে অবশ্যই আইনি ও নিয়ন্ত্রক নীতি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। বিভিন্ন দেশের অডিটিং নীতিমালা ও আর্থিক নিয়মাবলী সম্পর্কে অবগত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. প্রযুক্তিগত দক্ষতা

অডিটিং বর্তমানে বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং টেকনোলজির সাহায্যে পরিচালিত হয়। যেমন— SAP, Tally, QuickBooks ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে। এছাড়াও, ডেটা অ্যানালাইটিক্সের ওপর দক্ষতা অর্জন করা একজন অডিটরকে আরও কার্যকর করে তোলে।

৪. যোগাযোগ দক্ষতা

একজন অডিটরকে তার কাজ এবং রিপোর্ট সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সুস্পষ্ট ও কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে হবে। তথ্য উপস্থাপনা এবং সমস্যা সমাধানে সুস্পষ্ট যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অডিটিং পেশায় ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা

অডিটিং পেশায় ভবিষ্যতের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং নির্ভরযোগ্যতার চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে দক্ষ অডিটরদের প্রয়োজনীয়তাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে অডিটিং পেশার গুরুত্ব এবং কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর, এবং এনজিওসমূহ অডিটিংয়ের জন্য দক্ষ পেশাদারদের নিয়োগ করে থাকে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে অডিটিংয়ের সুযোগও রয়েছে। একজন সিএ বা অ্যাকসিএ সার্টিফাইড অডিটর বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কাজ করতে পারেন। তাছাড়া, অভ্যন্তরীণ অডিটিংয়ে দক্ষতা থাকলে বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতেও কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে অডিটর হওয়ার সম্ভাবনা

বাংলাদেশে অডিটিং পেশার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট হাউস এবং বিভিন্ন এনজিওগুলোতে অডিটিংয়ের কাজ রয়েছে। তাছাড়া, সরকারি দপ্তরেও প্রতিনিয়ত অডিটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকে। সরকারি প্রকল্পের হিসাব-নিকাশ সঠিকভাবে রাখার জন্য অডিটিং একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে একজন দক্ষ অডিটর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।

পেশাগত চ্যালেঞ্জ

অডিটিং পেশায় অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রচুর দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং আর্থিক জবাবদিহিতার জন্য চাপ থাকে। বিভিন্ন সময় অডিটরের কাছে ক্লায়েন্টদের আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করা এবং সঠিক উপায়ে তা বিশ্লেষণ করার জন্যও অনেক সময় ও পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়।

একজন সফল অডিটর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু টিপস

১. সততা বজায় রাখা: একজন অডিটরের জন্য সততা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ। অডিটিং কাজের সময় নিরপেক্ষ ও সঠিক মূল্যায়ন করা অপরিহার্য।

২. নতুন তথ্য ও প্রযুক্তির সাথে আপডেট থাকা: বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অডিটিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন নতুন সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন।

৩. সময় ব্যবস্থাপনা: প্রতিটি কাজ সময়মতো সম্পন্ন করা একজন অডিটরের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। অডিটিং পেশায় সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৪. নেটওয়ার্কিং: পেশাগত জীবনে সফল হতে গেলে বিভিন্ন পেশাদারের সাথে যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন। প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং একজন অডিটরকে কাজের নতুন নতুন সুযোগ এনে দিতে পারে।

অডিটিং পেশা একজন ব্যক্তির জন্য সম্মানজনক এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ। একজন অডিটর হিসেবে কাজ করতে গেলে সঠিক শিক্ষা, পেশাগত সার্টিফিকেশন, এবং কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অডিটিং পেশার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, এবং এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার মাধ্যমে একটি সফল পেশাগত জীবন গড়ে তোলা সম্ভব।

অডিটিং পেশায় যেসব গুণাবলী প্রয়োজন তার মধ্যে রয়েছে সততা, বিশ্লেষণী দক্ষতা, আইনি জ্ঞান, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং প্রফেশনালিজম। যদি আপনি এই গুণাবলী অর্জন করতে পারেন, তবে একজন সফল অডিটর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

 


Post Related Things:

Resume writing tips in Bangladesh, Job search strategies in Bangladesh, Professional networking in Bangladesh, Job exam preparation in Bangladesh, Exam syllabus in Bangladesh, Study materials for job exams in Bangladesh, Previous year question papers in Bangladesh, Tips for success in job exams in Bangladesh, Education tips in Bangladesh, Skill development in Bangladesh, Training programs in Bangladesh, Professional courses in Bangladesh, Online learning in Bangladesh, Job Interview Tips, Interview Preparation Tips, 

University admissions in Bangladesh , university admissions bd , admission date , medical admission requirements in Bangladesh , professional training courses in Bangladesh , skills development in Bangladesh , job interview questions in Bangladesh , cv writing format in Bangladesh , Job exam preparation in Bangladesh , job exam preparation, Education in Bangladesh

Leave a Comment