চাকরির ক্ষেত্রে তরুণ-তরুণীদের বিপুল আগ্রহ বিসিএসে। একটি বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যায়। এতটা সময় অনেকের পক্ষে শুধু বিসিএস প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। আর্থিক ও পারিবারিক প্রয়োজনে তাঁরা সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। অনেকে ভাবেন, বিসিএসে টিকতে হলে অন্য সব বাদ দিয়ে কেবল প্রস্তুতির দিকেই মনোযোগ দিতে হয়। এমন ভাবনা ভুল।
গত কয়েকটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল খেয়াল করলে দেখবেন, যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের বড় অংশ অন্য কোনো চাকরি করেছেন। প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্রসহ আকর্ষণীয় ক্যাডারগুলোতে চাকরিজীবীদের জয়জয়কার দেখা গেছে। আমি নিজেও চাকরি করা অবস্থায় ৪০তম, ৪১তম ও ৪৩তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করেছি।
সরকারি বা বেসরকারি অন্য চাকরির পাশাপাশি কার্যকরভাবে বিসিএস প্রস্তুতির জন্য প্রথমে আপনাকে পড়াশোনার নির্দিষ্ট একটা সময় বের করতে হবে। প্রতিদিন ওই সময় পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও বাদ দিতে হবে। প্রতিদিন একটা সময় অবশ্যই পড়াশোনায় দিতে হবে। অনেকে পড়াশোনা না করে শুধু চাকরি নিয়ে হতাশায় ভোগেন, এটা ভুল। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে অবিচল থাকতে হবে। প্রতিদিন নিজেকে সময় দিতে হবে।
প্রতিদিন নিজেকে একটা রুটিনের মধ্যে ফেলতে হবে। পড়ার রুটিন নিয়ে যুগ যুগ ধরেই আলোচনা ও সমালোচনা আছে। তবে রুটিন করার যে চিরাচরিত পদ্ধতি চলে আসছে, তা ততটা বাস্তবসম্মত নয়। সাধারণত প্রথম ৪০ মিনিট বাংলা, পরের ৪০ মিনিট ইংরেজি, তারপরের ৪০ মিনিট বিজ্ঞান—এই ধরনের রুটিন খুব একটা ফলপ্রসূ হয় না। দেখা যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঠিকমতো শেষ হয় না, ফলে একটা জগাখিচুড়ি প্রস্তুতি হয়। বরং রুটিন হতে হবে বিষয় অনুযায়ী। ছোট ছোট টার্গেট নির্ধারণ করে তা শেষ করতে হবে। প্রতিদিন পড়ার একইক্রম অনুসরণ না করে সুবিধা অনুযায়ী বিষয় ধরে পড়লে পড়ায় বৈচিত্র্য আসে, একঘেয়েমি ও অবসাদ লাগে না। ভোরে ঘুম থেকে উঠতে পারলে পড়ার অনেকটা সময় পাওয়া যায়। আর এ সময় চারপাশের পরিবেশ খানিকটা নিরব থাকায় পড়ায় খুব সহজেই মনোযোগ আসে এবং ভালো পড়া হয়।
যেহেতু চাকরি করা অবস্থায় পড়ার সময় অনেকটাই কম পাওয়া যায়, এ ক্ষেত্রে পড়তে হবে সিলেবাস ধরে। অনেক চাকরিপ্রার্থী এ জায়গায় শুরুতেই ভুল করে ফেলেন। সিলেবাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা না নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করাতে অনেকেই বুঝতে পারেন না, আসলে তাঁর কতটুকু পড়তে হবে আর কতটুকু ছাড়তে হবে। এ জন্য শুরুতেই পিএসসির ওয়েবসাইট থেকে বিসিএসের সিলেবাসটা দেখে নিতে হবে।
চাকরি করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ছেন, এ ধরনের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিসিএস প্রস্তুতির ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনাপূর্ণ প্রস্তুতি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ পড়াশোনার চেয়ে সঠিক ও পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়াশোনাটাই মূখ্য ভূমিকা পালন করে। অনেককেই দেখা যায় তাঁরা দিনের বেশির ভাগ সময় পড়ার টেবিলে বসে থাকলেও পড়ায় মনোযোগ দেয় খুবই কম, যা কিনা হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দেয়। পড়াকে সময় দিয়ে না মেপে বরং সময়কে পড়া দিয়ে মাপুন।
প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় আবেগের কোনো স্থান নেই। পড়াশোনাকে চাপ মনে না করে বরং উপভোগ করতে শিখুন। বিসিএস প্রিলিমিনারি থেকে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ও চাপমুক্ত থাকতে হবে। অতিরিক্ত প্রত্যাশা অনেক সময় পরীক্ষার্থীর স্নায়ুচাপ সৃষ্টি করে। ফলে ভালো ফলাফল আসে না। মনে রাখতে হবে, বিসিএস হলো কর্মজীবনে প্রবেশের জন্য একটি পরীক্ষা মাত্র। সময়কে বিলম্বিত বা দীর্ঘ করার যেহেতু সুযোগ নেই, সেহেতু বিদ্যমান সময়ের মধ্যেই যতটুকু শেখা সম্ভব, ততটুকুই শিখুন। অবান্তর ও অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণ না করে বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে সময়কে কাজে লাগালে সফলতা আসবেই।
সুত্রঃ প্রথম আলো