সন্তান জন্ম দিয়েই শায়লা ছুটলেন এসএসসি পরীক্ষার হলে
SA-23K 522
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন শরীয়তপুরের শায়লা আক্তার (১৮)। আজ মঙ্গলবার ছিল শেষ লিখিত পরীক্ষা। এর ১৫ মিনিট আগে হাসপাতালে কন্যাসন্তান জন্ম দেন তিনি। এরপর ছুটে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে। পরীক্ষা দিয়ে ফিরে আসেন হাসপাতালে নবজাতকের কাছে।
শায়লা শরীয়তপুর পৌর এলাকার আংগারীয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। পাশের আংগারীয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। তিনি শরীয়তপুর পৌরসভার নীলকান্দি এলাকার সবুজ মিয়ার স্ত্রী।
পারিবারিক সূত্র জানায়, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সবুজ মিয়ার সঙ্গে শায়লা আক্তারের বিয়ে হয়। এরপর তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। এর মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। ওই অবস্থায় তিনি পরীক্ষা দিতে থাকেন। মঙ্গলবার ছিল তাঁর ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের পরীক্ষা। সকালে প্রসববেদনা উঠলে তাঁকে জেলা সদরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। এরপর ১০টা ৪৫ মিনিটে কন্যাসন্তান জন্ম দেন তিনি। বেলা ১১টার সময় পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। সুস্থভাবে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ছুটে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে।
হাসপাতাল থেকে আংগারীয়া উচ্চবিদ্যালয়ের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। পরিবারের সদস্যরা শায়লাকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হন বেলা সাড়ে ১১টায়। কেন্দ্রসচিব ও শিক্ষকদের সহায়তায় তিনি পরীক্ষায় অংশ নেন।
মঙ্গলবার বিকেলে রূপসী বাংলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, একটি কেবিনে শায়লার প্রসব-পরবর্তী চিকিৎসা চলছে। সদ্য জন্ম নেওয়া কন্যা ঘুমাচ্ছে। শায়লার সন্তান দেখার জন্য আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে আসছেন।
শায়লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্তান পেটে নিয়েই আটটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। আজ লিখিত পরীক্ষার শেষ দিনে কোল আলো করে সন্তান এসেছে। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি নির্বিঘ্নে আমার কোলে সন্তান দিয়েছেন। সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিতে পারায় শিক্ষক ও চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি সন্তান লালন-পালনের পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাব।’
শায়লার স্বামী সবুজ মিয়া বলেন, শায়লা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন, তা কল্পনাও করতে পারেননি। সন্তান জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে ওঠেন। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের কাছে সন্তান রেখে তাঁকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
আংগারীয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রসচিব আনোয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, একজন শিক্ষার্থীর কতটা অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে প্রসববেদনা উপেক্ষা করে পরীক্ষায় বসতে পারেন! তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারেননি, শায়লা ঠিকমতো পরীক্ষা দিতে পারবেন। তাঁর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করে একজন নারী চিকিৎসকে উপস্থিত রাখা হয়েছিল। সুস্থভাবে পরীক্ষা শেষ করে সন্তানের কাছে ফিরে যাওয়ায় তাঁরা অনেক খুশি হয়েছেন।
রূপসী বাংলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডি কে সঞ্জয় প্রথম আলোকে বলেন, শায়লার প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি দেখে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। অনেক সাহস ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণেই প্রসববেদনা ভুলে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পেরেছেন শায়লা
সূএ : প্রথম আলো