মৌখিক পরীক্ষার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক নিয়োগ

মৌখিক পরীক্ষা র আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি

লেখা:
নাজমুল হুদা, উপপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬২৮ জন। এই প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা ১৬ এপ্রিল শুরু হবে। পরীক্ষা চলবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত।

হাতে সময় আছে আর মাত্র এক সপ্তাহ। শেষ সময়টুকু পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে লাগাতে হবে। যেহেতু প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন, তাই ধরেই নেওয়া যায় আপনাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট ভালো।

প্রিলিমিনারি পর্বের নম্বর যোগ হয় না, আর লিখিত পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর আপনি জানেন না, তাই শেষ ধাপে নিজেকে আবার প্রমাণের পালা।

যে কয় দিন সময় আছে, আর ভাইভা বোর্ডে যে কয় মিনিট সময় পাবেন—উভয় ক্ষেত্রেই নিজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও পারদর্শিতার ওপর নির্ভর করবে আপনার স্বপ্নপূরণের সম্ভাবনা।

 

১. লিখিত পরীক্ষার ফলাফল-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী হাতে লেখা দরখাস্ত, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রবেশপত্র বা বিশেষ ক্ষেত্রে দালিলিক প্রমাণপত্র এখন থেকেই গুছিয়ে রাখুন, যাতে শেষ মুহূর্তে বা মৌখিক পরীক্ষার আগে বাড়তি চাপ না পড়ে।

২. মৌখিক পরীক্ষায় ভারসাম্য বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এ জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। এবার সবার মৌখিক পরীক্ষা রমজানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

মৌখিক পরীক্ষা র তারিখ ও উপস্থিতির সময় অনুযায়ী হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে যথাসময়ে রওনা হবেন, যাতে কোনোভাবেই পৌঁছাতে দেরি না হয়।

আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিন। যথাসম্ভব চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

৩. মানানসই মার্জিত পোশাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষা র কক্ষে উপস্থিত হন।

পরীক্ষকের অনুমতি নিয়ে কক্ষে প্রবেশের পর স্বাভাবিক শব্দে সালাম দিন। অনুমতি পাওয়ার পর ধন্যবাদ জানিয়ে বিনয়ের সঙ্গে সোজা হয়ে বসুন।

যিনি প্রশ্ন করবেন, তাঁর দিকে চোখ রাখুন। বাংলা বা ইংরেজি যে ভাষায় প্রশ্ন করা হবে, সেভাবেই উত্তর দিতে পারলে ভালো।

নিজের বাচনভঙ্গি বা চেহারা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না।

নিজের মতো করে সাবলীলভাবে নিজেকে উপস্থাপন করুন, উত্তর দিন, যেভাবে আপনি অন্যের কাছ থেকে আশা করেন।

৪. নিজের সম্পর্কে জানতে চাইলে কী কী বলবেন, ক্রমানুসারে লিখে অনুশীলন করে নিতে পারেন। মুখস্থ করে মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টির দরকার নেই।

নিজের দক্ষতা, শক্তির জায়গা, দুর্বলতা, পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে ব্যক্তিগত জীবনের আলোকে গুছিয়ে বলার অভ্যাস করুন।

পঠিত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা বিশিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কেও যতটা সম্ভব জানুন।

এ ছাড়া নিজ এলাকার কবি-সাহিত্যিক, রাজনৈতিক কিংবা অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত ঘটনাসহ স্থানীয় নদ-নদী, প্রাকৃতিক-ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটন স্থান নিয়েও ধারণা নিয়ে যান।

৫. স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বাণিজ্য, অর্থনীতি, ব্যবসায় শিক্ষাসংক্রান্ত পড়াশোনা না থাকলেও বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

আপনার পঠিত বিষয়ের মৌলিক ইস্যু, তত্ত্ব, সংজ্ঞা-ব্যাখ্যাসহ জেনে নিন। এগুলো ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও আপনার অর্জিত জ্ঞান বা অন্য কোনো কাজের অভিজ্ঞতা ব্যাংকিং সেক্টরে কীভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখুন, যাতে গুছিয়ে বলতে পারেন।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কাজের সুযোগ পেলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, উন্নয়ন ও ব্যাংকিং খাতের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখার জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করার বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করুন,

যাতে পরীক্ষকেরা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করেন।

৬. মৌখিক পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার আগে আবেদনকৃত পদের কাজ ও দায়িত্ব, সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যান।

বর্তমানে কোনো চাকরিতে বহাল থাকলে তা ছেড়ে কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাকরিতে আসতে চাচ্ছেন, এ ব্যাপারেও নিজের অবস্থান পরিষ্কার রাখুন।

একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, উল্লেখযোগ্য অর্জন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের নাম, শাখা সংখ্যা ইত্যাদি জেনে রাখতে পারলে ভালো।

এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে পারেন।

৭. দেশের সামগ্রিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা, সরকারি-বেসরকারি, দেশি-বিদেশি, ইসলামিক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জেনে যান।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের অর্জন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উন্নত রাষ্ট্রের রূপরেখা, টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য, সম্ভাবনাময় ই-কমার্স সেক্টরের বিকাশে চ্যালেঞ্জ, গার্মেন্টস সেক্টরসহ অন্যান্য রপ্তানিপণ্য বাণিজ্য, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মেগা প্রকল্পগুলোর হালনাগাদ জেনে রাখুন।

৮. আপনি যে বিষয়েই পড়াশোনা করে থাকুন না কেন, ব্যাংকের ভাইভা বোর্ডে যাওয়ার আগে অর্থনীতির মৌলিক ইস্যু যেমন মনিটারি পলিসি, ফিস্কেল পলিসি, বাজেট, জিডিপি, জিএনপি, মাথাপিছু আয়, ফরেন রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রা সংকোচন,

মানি মাল্টিপ্লায়ার, মানি মার্কেট, ক্যাপিটাল মার্কেট, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বৈদেশিক বিনিময় হার, চাহিদা, জোগান, আমদানি, রপ্তানি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নিন।

যেকোনো ভালো বই বা গুগল করে পড়ে নিতে পারেন।

৯. সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে নজর রাখুন।

এসব ঘটনা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে পড়াশোনা ও বিশ্লেষণ করুন।

জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয় কলাম, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক পাতায় নিয়মিত চোখ রাখুন।

বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়, লেবাননের দেউলিয়া ঘোষণা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও পশ্চিমা অবরোধসহ খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে সামগ্রিক ধারণা থাকলে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আপনার জন্য সহজ হবে।

১০. কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন করলে বিরক্ত না হয়ে বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন।

উত্তর দেওয়ার সময় কৌশলী হোন। আপনার দেওয়া উত্তরের ভিত্তিতে পরবর্তী প্রশ্ন আসতে পারে। আন্দাজে উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

যতটুকু জানা আছে, ততটুকুই বলুন।

জানা না থাকলে বিনয়ের সঙ্গে বলুন, ‘দুঃখিত, এ ব্যাপারটা আমার জানা নেই।’ মৌখিক পরীক্ষায় তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা, সাবলীল উপস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশই বয়ে আনতে পারে চূড়ান্ত সাফল্যের বার্তা।

Leave a Comment