কর্মী খুঁজছে ইউরোপ, উচ্চ-বেতনের লোভনীয় প্রস্তাবেও মিলছে না

ইউরোপ

ইউরোপ

ইউরোপ শীর্ষস্থানীয় ইউরোপীয় বিভিন্ন হোটেল চেইন অভিজ্ঞতা ছাড়াই, এমনকি জীবনবৃত্তান্ত ছাড়াই কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে কম বেতন দেওয়ায় কর্মীরা চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। পুরোনো কর্মীরা চলে যাওয়ায় করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী ভ্রমণের চাহিদা মেটাতে পারছে না হোটেলগুলো। যে কারণে নতুন করে কর্মীর সংকটে পড়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিজ্ঞতা এবং জীবনবৃত্তান্ত ছাড়াই নিয়োগের প্রস্তাব দিচ্ছে

ইউরোপের বৃহত্তম হোটেল কোম্পানি অ্যাকর (এসিসিপি.পিএ) এই পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগের জন্য পরীক্ষামূলক উদ্যোগ শুরু করেছে। এসিসিপি.পিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেবাস্তিয়ান বাজিন বলেছেন, যারা আগে আতিথেয়তা শিল্পে কাজ করেননি, তাদেরও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। গত মাসে কাতার অর্থনৈতিক ফোরামে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এই তথ্য জানান তিনি।

তিনি বলেন, বিশ্বের ১১০টিরও বেশি দেশে মারকিউর, ইবিস এবং ফেয়ারমন্টের মতো ব্র্যান্ডের হোটেল পরিচালনা করছে অ্যাকর। বিশ্বজুড়ে তাদের এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য ৩৫ হাজার কর্মী প্রয়োজন।

বাজিন বলেন, ‘আমরা দশ দিন আগে লিয়ন এবং বোর্দোতে চেষ্টা করেছি। এই সপ্তাহে আমরা কোনও ধরনের জীবনবৃত্তান্ত, এমনকি চাকরির অভিজ্ঞতা নেই; এমন লোকজনের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।’

সেবা সীমিত হয়ে পড়ায় অ্যাকর স্বল্পমেয়াদে ফ্রান্সে তরুণ এবং অভিবাসীদের নিয়োগ দিচ্ছে। তিনি বলেন, উত্তর আফ্রিকা থেকে শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য লোকজন আসছে। বর্তমানে দুপুরের খাবারের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা অথবা সপ্তাহে মাত্র পাঁচ দিন সেগুলো খোলা রাখা হচ্ছে। অন্য কোনও সমাধান নেই।

তিনি বলেন, নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ছয় ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই সময় তাদের কী ধরনের কাজ করতে হবে; সেই বিষয়ে শেখানো হয়। কর্মী ঘাটতি বিশেষ করে স্পেন এবং পর্তুগালে হোটেল পরিচালনায় সংকট তৈরি করেছে। করোনাভাইরাস মহামারির আগে এই দুই দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল যথাক্রমে ১৩ এবং ১৫ শতাংশ।

কর্মী সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশ দুটিতে হোটেল মালিকরা উচ্চ বেতন, বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা, বোনাস এবং স্বাস্থ্য বীমার মতো সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব দিচ্ছে।

স্প্যানিশ হোটেল কোম্পানি মেলিয়ার (এমইএল.এমসি) সিইও গ্যাব্রিয়েল এসকারার মাদ্রিদে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অনেক কর্মচারী অন্য সেক্টরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য আমরা একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে এই শিল্পের শুরু করছি এবং মেধাবীদের পাওয়ার জন্য আমাদের বেগ পেতে হবে।’

কর্মীদের আকৃষ্ট করার জন্য তার কোম্পানি রিসোর্টের কাছাকাছি এলাকায় ভাড়া বাসার ঘাটতি দেখা দেওয়ায় হোটেল কক্ষেই কর্মীদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ছোট ছোট হোটেল মালিকরা একই ধরনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।

লিসবনের অন্যতম আইকনিক হোটেল ‘হোটেল মুন্ডিয়াল।’ এই হোটেলের অপারেশন ডিরেক্টর বলেছেন, তারা বর্তমানে ৫৯ জন কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করছে। পর্যাপ্ত কর্মী পাওয়া না গেলে কিছু হোটেলে অতিথির সংখ্যা এবং সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা যদি নিয়োগ দিতে না পারি, তাহলে আমাদের পরিষেবায় কাটছাঁট করতে হবে। গত দুই বছর ধরে রাজস্ব আহরণ করতে না পারা একটি শিল্পের জন্য এটি দুঃখজনক এবং নাটকীয় ঘটনা।

স্পেন এবং পর্তুগালে কর্মী সংকট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দেশ দুটির জাতীয় আতিথেয়তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, স্পেনের ক্যাটারিং শিল্পে ২ লাখ কর্মী ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া পর্তুগিজ হোটেলগুলোতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে কমপক্ষে ১৫ হাজার কর্মী প্রয়োজন।

ক্যাটারিং সার্ভিস খাতের একটি সংস্থার কর্মকর্তা জোসে লুইস ইজুয়েল বলেছেন, এই সংকটের সমাধান অবশ্যই আরও বেশি মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে করতে হবে।

তবে লোভনীয় প্রস্তাবের মাধ্যমে কর্মীদের ফেরানোর চেষ্টাও চলছে। স্পেনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটির বার এবং রেস্তোরাঁগুলো এক বছর আগের তুলনায় প্রথম ত্রৈমাসিকে শ্রমিকদের মজুরি প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু পর্যটন শিল্প এখনও এমন খাত রয়ে গেছে, যেখানে কর্মীদের সবচেয়ে কম বেতন দেওয়া হয়। দেশটিতে একজন কর্মী প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার ২০০ ডলার (বাংলাদেশি প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ১২৭ টাকার বেশি) মজুরি পান।

প্রতিবেশী পর্তুগালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং জাতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের এক জরিপে বলা হয়েছে, আতিথেয়তা শিল্পের কর্মীদের বেতন চলতি বছর ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে দেশটিতে বর্তমানে এই খাতের কর্মীরা ৮৮১ ইউরো বেতন পান; যা সর্বনিম্ন ৭০৫ ইউরোর কিছু বেশি।

বাজিন বলেছেন, হোটেলগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যটক হলেও কর্মী সংকট মোকাবিলা করতে পারবেন তারা। কিন্তু যখন পুরোপুরি হোটেল বুক হয়ে যাবে, তখন সেটি করা সম্ভব হবে না। 

তিনি বলেন, সমস্যাটি হলো— জুলাই এবং আগস্টের শেষ পর্যন্ত যখন হোটেলগুলো শতভাগ অতিথিতে পরিপূর্ণ থাকবে, তখন কী আমি সবাইকে সেবা দিতে পারবো? বাজিন বলেছেন, অতীতে এই শিল্পের কর্মীদের যথাযথ মজুরি অথবা জীবনমানের উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা অন্ধ হয়ে গেছি। আমরা অনেক মানুষের দিকে মনোযোগ দিতে পারিনি। সম্ভবত অনেক দিন ধরে কিছু মানুষকে কম বেতন দিচ্ছি। সুতরাং এটি জেগে ওঠার এক আহ্বান।

সুত্রঃ ঢাকা পোস্ট

Leave a Comment