কানাডায় উচ্চশিক্ষায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের বড় সমস্যা আবাসন

কানাডা
কানাডা

উম্মে মিম মহসিন যখন বাংলাদেশ থেকে কানাডার ডালহৌসি ইউনিভার্সিটিতে পড়তে নোভা স্কটিয়ার হ্যালিফ্যাক্সে যান, সেখানে তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়া। 

বাংলাদেশে বসে হ্যালিফ্যাক্সে কোনো অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া সহজ না। অনেক চেষ্টার পর সেখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটির সহযোগিতায় থাকার একটি জায়গা খুঁজে পান তিনি। 

ইন্টারন্যাশনাল ডেভলেপমেন্টের শিক্ষার্থী উম্মে মিম মহসিন পিআইই নিউজকে বলেন, কানাডার নাগরিকদের জন্যই হ্যালিফ্যাক্সের হাউজিং মার্কেট খুব একটা সুবিধাজনক না, আমরা তো বহুদূরের। আমাদের মতো অনেকেরই এই থাকার জায়গাটা খুঁজতে গিয়ে খুব বাজে অভিজ্ঞতা হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে যা বেশ যন্ত্রণাদায়ক।     

আবাসনের জন্য কানাডিয়ান আবেদনকারীদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের। অনেক বাড়িওয়ালা আগের অ্যাপার্টমেন্ট বা ক্রেডিট স্কোর থেকে রেফারেন্স চান, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নাও থাকতে পারে। 

উপরন্তু, চাহিদা বেশি থাকায় ভাড়াও পড়ে যাচ্ছে বেশি। ফলে যারা একটি নির্দিষ্ট বাজেট হাতে নিয়ে দেশটিতে পড়ালেখা করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য খরচ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।  

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যেখানেই পড়তে যাচ্ছেন সেখানেই তাদের একই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে, সেটা টরন্টো বা ভ্যাঙ্কুভারের মতো বড় শহর হোক বা ছোট শহর হোক। পোস্ট-সেকেন্ডারি প্রতিষ্ঠান আছে এমন প্রায় সব জায়গায় পর্যাপ্ত আবাসনের অভাব রয়েছে।   

টরন্টোর টেন্যান্ট অন্টারিওর অ্যাডভোকেসি সেন্টারের ডনিয়া মজিদ বলছেন, দুর্ভাগ্যবশত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কানাডিয়ান রেন্টাল মার্কেট সম্পর্কে খুব একটা ধারণা থাকে না। আর যেহেতু তারা বাসস্থান খুঁজে পেতে মরিয়া থাকে, তাই তারা খুব সহজে স্ক্যামারদের লক্ষ্যে পরিণত হন।  

এমনও হয়েছে অনলাইনে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করে অনেক শিক্ষার্থী ৩ হাজার মার্কিন ডলার জমাও করে দিয়েছেন। পরে তারা বুঝতে পেরেছেন যে তারা আসলে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে টাকা হারিয়েছেন। 

মজিদ সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অ্যাপার্টমেন্ট খোঁজার সময় সতর্ক থাকতে হবে। কোনো বিজ্ঞাপনে অবিশ্বাস্য রকমের কম ভাড়ার কথা বলা হয়, তবে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। কেউ যদি বাসা দেখানোর আগে ভাড়া চেয়ে বসেন, সেটা নিয়েও সতর্ক হতে হবে।  

তিনি শিক্ষার্থীদের তাদের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ হাউজিং অফিস থেকে পরামর্শ নিতে বলেছেন। তিনি বলেন, যদি কোনো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মনে করে যে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছে, তারা সহায়তার জন্য তাদের স্থানীয় কমিউনিটি লিগ্যাল ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে পারেন। 

এ সমস্যা কেবল কানাডাতেই রয়েছে ব্যাপারটা তা নয়। আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যেও একই ধরনের সমস্যা রয়েছে। 

কানাডায় এ সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টাও করা হচ্ছে। সাসকাচোয়ানের রেজিনা বিশ্ববিদ্যালয় ‘দ্য রিয়েলি বিগ ডিল’ নামে বড় ছাড়ে একটি প্যাকেজে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন এবং আবাসনের ব্যবস্থা করছে। এর আওতায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্নাতক ডিগ্রির চার বছরে ২১ হাজার মার্কিন ডলার বাঁচাতে পারবেন।  

কুইবেক প্রদেশে, অলাভজনক সংস্থা ইউটিআইএলই শিক্ষার্থীদের আবাসন চাহিদা মেটাতে কাজ করছে। মন্ট্রিল, কুইবেক সিটি এবং ট্রয়েস রিভিয়েরেসে তাদের কিছু ভবন রয়েছে ও বাকিগুলো নির্মাণাধীন। 

তবে ইউটিআইএল শুধুমাত্র ৭১৫টি অ্যাপার্টমেন্ট করছে। যেখানে মন্ট্রিলেই ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি পোস্ট-সেকেন্ডারি শিক্ষার্থী রয়েছে, যার মধ্যে ৩৭ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী।  

সূত্র : ঢাকা পোস্ট। 

Leave a Comment