৪৩তম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি যেভাবে নেওয়া উচিত

কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারে

৪৩তম বিসিএস

৪৩তম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন ১৫ হাজারের বেশি প্রার্থী। আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা ২৪ জুলাই শুরু হবে। কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে চাকরি-বাকরি পাতায়। বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি কীভাবে নিলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে আজ পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তারিক মনজুর

ভাবসম্প্রসারণ

প্রশ্নে দুটি বাক্য থাকে, একটির ভাবসম্প্রসারণ করতে হয়। নম্বর ২০। এ উত্তর করার জন্য ২০ মিনিটের বেশি সময় নেওয়া যাবে না। মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ বাক্যে প্রশ্নের ভাবটিকে সম্প্রসারিত করতে হয়। উত্তর লেখার সময় একই কথা বারবার না বলে বক্তব্যকে নানাভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করুন। তা ছাড়া প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কয়েকটি বিষয় আগেই ঠিক করে রাখা যেতে পারে। যেমন: বাক্য বা বিষয়টির ব্যাখ্যা করার জন্য কী উদাহরণ দেওয়া হবে, বিষয়টিকে কোন কোন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করা যায়, এ ধরনের আর কী কী বক্তব্য আছে, এ বক্তব্যের বিপরীতে কোনো যুক্তি দেওয়া যায় কি না ইত্যাদি।

সারমর্ম

সারমর্ম একটি থাকে পদ্য থেকে, একটি থাকে গদ্য থেকে। যেকোনো একটির উত্তর করতে হয়। যেটি ভালো পারবেন, সেটির উত্তর করবেন। সারমর্মের নম্বর ২০, সময় পাবেন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। মাত্র তিন বাক্যে বিষয়টির মূল কথা লিখতে হয়; বানান ভুল করা যাবে না। পুরোনো প্রশ্ন দেখে প্রশ্নের নমুনা বোঝার চেষ্টা করুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলোর উত্তর বিভিন্ন বইপত্র, গাইড বা অনলাইনে পাবেন। যেখান থেকেই উত্তর পড়ুন না কেন, মুখস্থ করবেন না; বরং প্রথমে নিজে লিখুন; তারপর ওই উত্তরের সঙ্গে আপনার উত্তর মিলিয়ে দেখুন।

সাহিত্য

সাহিত্যের প্রশ্ন থাকে ১০টি। উত্তর করতে হয় ১০টিরই। প্রতিটি প্রশ্নের মান ৩; মোট নম্বর ৩০। ১০টি উত্তর লেখার জন্য ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নিতে পারেন। পুরোনো প্রশ্ন দেখে প্রশ্নগুলো এভাবে ভাগ করে নিন—ক. প্রাচীন যুগ: চর্যাপদ, বাংলা ভাষার উদ্ভব; খ. মধ্যযুগ: শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, বৈষ্ণব কবিতা, মঙ্গলকাব্য, শ্রীচৈতন্য, প্রণয়কাব্য, মৈমনসিংহ গীতিকা, দোভাষী পুথি, কবিগান, নাথসাহিত্য; গ. আধুনিক যুগ: গদ্যের উদ্ভব ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, রোকেয়া ইত্যাদি। তবে খেয়াল রাখবেন, ১৯৪৭-পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে ইদানীং প্রচুর প্রশ্ন হচ্ছে।

এসব প্রশ্নকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করবেন—১৯৪৭-পরবর্তী উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ ও নাটক। সাহিত্যের উত্তর লেখার সময় তথ্য ও বিশ্লেষণকে সমান গুরুত্ব দিতে হয়। একেকটি উত্তরের আয়তন মোটামুটি পাঁচ থেকে সাত বাক্যের হবে; অপ্রয়োজনীয় কথা লিখে উত্তরের আয়তন বড় করবেন না। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বিষয় ধরে ধরে পড়বেন। এলোমেলোভাবে প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করবেন না। প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগের সাহিত্য থেকে উত্তর করার সময় সম্ভব হলে উদ্ধৃতি দেবেন।

অনুবাদ

অনুবাদে ভালো করার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করা দরকার। ইংরেজি দৈনিক থেকে সপ্তাহে দু-তিনটি সম্পাদকীয় বাংলায় অনুবাদ করতে পারেন। অনুবাদ করার আগে বিষয়টি জোরে জোরে কয়েকবার পড়ে নিন। এভাবে পড়ার কারণে আপনার কথনদক্ষতাও বাড়বে। পড়ার সময় কঠিন শব্দগুলো চিহ্নিত করুন। শব্দের অর্থ জানার জন্য অভিধানের সহায়তা নিন। পরীক্ষায় একটি অনুচ্ছেদ অনুবাদ করতে দেওয়া হয়। নম্বর ১৫। এটি লেখার জন্য কমবেশি ১৫ মিনিট সময় নেওয়া উচিত।

সংলাপ

সংলাপের জন্য নির্ধারিত নম্বর ১৫। এটি ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হবে। সংলাপ লেখার শুরুতে স্থান ও সময় উল্লেখ করতে হয় এবং কথোপকথনে চরিত্রের অভিব্যক্তি দিতে হয়। অনলাইন থেকে নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখার কোনো নমুনা দেখে নিন। দু-তিনটি সংলাপে বিষয়-সংশ্লিষ্ট কিছু তথ্য দিতে হবে।

পত্র

পত্র কোনো পৃষ্ঠার মাঝখান থেকে লেখা শুরু করবেন না। দৈনিক পত্রিকার জন্য পত্র ও প্রতিবেদন পরীক্ষায় বেশি আসে; এটি উত্তর করলে নম্বরও ভালো পাওয়া যায়। তাই বই, গাইড বা অনলাইনের সূত্র থেকে দৈনিক পত্রিকায় পত্র ও প্রতিবেদন লেখার কৌশল শিখে নিন। এ ছাড়া স্মারকলিপি, ব্যবসায়িক পত্র, দরখাস্ত, এমনকি ব্যক্তিগত পত্রের বিষয়েও উত্তর করতে হতে পারে। সেসব পত্রের কাঠামোও দেখে রাখুন। পত্র কার বরাবর লিখতে হবে, সেটি অনেক সময় দেওয়া থাকে না। প্রস্তুতির সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষ কে হতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করুন। পত্রের জন্য নম্বর ১৫। এ জন্য কমবেশি ১৫ মিনিট সময় পাবেন।

গ্রন্থ সমালোচনা

গ্রন্থ সমালোচনা লেখার জন্য গ্রন্থ সম্পর্কে কিছু তথ্য অবশ্যই জেনে রাখা দরকার। সাধারণত গ্রন্থের নাম দেওয়া থাকে না, বিষয় দেওয়া থাকে। পরীক্ষার জন্য উপযোগী এমন কিছু বিষয়: ভাষা আন্দোলনভিত্তিক উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস বা কাব্য, আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস, সামাজিক বা আঞ্চলিক উপন্যাস, রূপক-সাংকেতিক নাটক, প্রহসন, ইতিহাসমূলক গ্রন্থ ইত্যাদি। গ্রন্থের নাম নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকলে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনলাইন থেকে বইটির পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে পড়ুন। অন্তত ভূমিকা ও ফ্ল্যাপের লেখাগুলো দেখুন। গ্রন্থ সমালোচনার জন্য নম্বর ১৫। এটি চার থেকে পাঁচটি অনুচ্ছেদে লিখতে হবে। লেখার জন্য ২০ মিনিট সময় নিতে পারেন।

রচনা

পরীক্ষায় পাঁচটি রচনা থাকে, একটির উত্তর করতে হয়। রচনার জন্য নম্বর ৪০। এটি লেখার জন্য ৫০ মিনিট সময় রাখা উচিত। রচনায় প্রচুর তথ্য দেওয়ার দরকার নেই, বরং তথ্যকে বিশ্লেষণ করে লিখতে হবে। একটি রচনার শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আকর্ষণীয় সূচনা লেখার পরিকল্পনা করতে হবে। রচনাটিকে কোন কোন বিষয়ে ভাগ করে লিখবেন, এরও পরিকল্পনা করতে হবে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে। পুরোনো প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে পাঁচ থেকে দশটি রচনার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। রচনার তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনে অনলাইন সূত্র ব্যবহার করুন।

বাংলা বিষয়ে ভালো প্রস্তুতির জন্য আগের প্রশ্নগুলো ভালো করে দেখে নিন। পরীক্ষার খাতায় উত্তরগুলো ধারাবাহিকভাবে করবেন। প্রশ্ন যত নম্বরের, সময়ও মোটামুটি তত মিনিট পাবেন। দুটি উত্তরের মাঝখানে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখবেন। মূল পরীক্ষার আগে অন্তত একটি মডেল টেস্ট দিয়ে নিতে হবে। মনে রাখবেন, লিখিত পরীক্ষার সফলতা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার প্রস্তুতির ওপর। তাই পুরোনো প্রশ্ন অনুযায়ী বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি নিন। ৩৫তম বিসিএসের আগের প্রশ্ন দেখার দরকার নেই।

সুত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Comment