অনার্স পড়াকালেই বিসিএসের প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে

অনার্স পড়াকালেই বিসিএসের প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে

NT 30K 50

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই অনেকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির পড়াশোনা শুরু করে দেন। আবার অনেকে শেষ পর্যায়ে গিয়ে শুরু করেন, তখনই দেখা যায় দিশাহারার মতো অবস্থা! অভিজ্ঞ ও বাস্তবে সফলদের পরামর্শ হলো অনার্সে পড়াশোনার সময় থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা। নিজেকে প্রস্তুত করতে চাইলে কিভাবে এগোনো উচিত, সেসব বিষয় নিয়ে ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী মো. হালিমুল হারুন লিটন এবং ৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার মো. গোলাম রব্বানী সরদারের স’ঙ্গে আলাপ করে বিস্তারিত লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

একাডেমিক পড়াশোনা বাদ দিয়ে নয়: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকে অনেকেই বিসিএসসহ অনান্য চাকরি পরীক্ষার গাইড বই পড়া শুরু করেন। একাডেমিক পড়াশোনাকে পাত্তাই দেন না। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই তাঁর উৎসাহে ভাটা পড়ে। অন্যদিকে একাডেমিক ফলাফল খারাপ হতে থাকে। তারপর স্নাতক সম্পন্ন করার পর কেউ কেউ কাঙ্ক্ষিত চাকরিটা পেয়েও যান। তবে অনেকেই চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। বিসিএস পরীক্ষায় সফল হতে একাডেমিক ভালো ফল তেমন প্রয়োজন না হলেও ভালো ফল ভাইভা বোর্ডে ইতিবাচক ইমপ্রেশন তৈরি করে। একাডেমিক ভালো ফল একজন প্রার্থীকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তা ছাড়া বেসরকারি চাকরিসহ বিষয়ভিত্তিক চাকরিতে একাডেমিক ভালো ফলের গুরুত্ব বহন করে। তাই কোনোভাবেই একাডেমিক পড়াশোনাকে বাদ দিয়ে বিসিএস বা অন্যান্য চাকরির বই পড়া উচিত হবে না। বিসিএসের গাইড বই পড়তে চাইলে চতুর্থ বর্ষ থেকে পড়া যেতে পারে।

ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়াই:ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। তাই এ ভাষাটা আয়ত্ত করা সবারই দরকার। ছোটবেলা থেকে ইংরেজি পড়ে অনেকেই ইংরেজিতে দক্ষ হতে পারেন না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের প্রথম থেকেই ইংরেজিতে ভালো লেখার দক্ষতা, কথা বলার দক্ষতা, যেকোনো ইংরেজি লেখা দেখে পড়ে বোঝার দক্ষতা, ইংরেজিভাষী মানুষের কথা শুনে বোঝার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। নিয়মিত ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।ইংরেজি থেকে বাংলা, বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ অনুশীলন করা যেতে পারে। সমমনা বন্ধু, সিনিয়রদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে পারলে ভালো। ইংরেজি ভাষা পরিমাপের আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষা আইইএলটিএস, টোফেল প্রভৃতি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে ইচ্ছা হলে এসব পরীক্ষার সার্টিফিকেট কাজে দেবে।

যোগাযোগ দক্ষতা দরকারি:বর্তমান সময়ে ক্যারিয়ারে ভালো করতে হলে যোগাযোগ দক্ষতা অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। যোগাযোগ দক্ষতা না থাকলে অনেক সুযোগই হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কিভাবে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে হয়, কিভাবে ফরমাল ই-মেইল লিখতে হয়, কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলতে হয়, কিভাবে অনেক মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে সুন্দর করে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয় প্রভৃতি বিষয়ে অনুশীলনের মাধ্যমে শিখতে হবে। তাহলে চাকরির ভাইভায় নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে।

নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস: দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ব্যক্তিকে শুধু চাকরির প্রস্তুতিতে এগিয়ে রাখে না, বরং একজন মানুষকে স্মার্ট ও তথ্যসমৃদ্ধ করে। প্রত্যেক শিক্ষিত, সচেতন মানুষেরই নিয়মিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করা উচিত। আর এই অভ্যাসটা আগে থেকে না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকে করতে পারলে ভালো।আনন্দের সঙ্গে পত্রিকা পড়তে হবে। প্রতিদিন একটি বাংলা পত্রিকা ও একটি ইংরেজি পত্রিকা পড়তে হবে। বিশেষ করে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় পাতা, আন্তর্জাতিক পাতা, অর্থনীতির পাতা পড়তে পারলে দারুণ কাজে দেবে। পত্রিকা পড়ার সময় অনুসন্ধিত্সু মন নিয়ে পড়তে হবে। বিভিন্ন মতের সঙ্গে নিজের মতকে মেলাতে হবে। পত্রিকা পড়ার অভ্যাস বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় কাজে দেবে।

টিউশনিতে প্রস্তুতি ও আয়: বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে অনেকেই আর্থিক লাভের জন্য টিউশনি করে থাকেন। টিউশনি শুধু আর্থিকভাবে লাভবান করে না, বরং একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর চাকরির প্রস্তুতির জন্যও সহায়ক নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে সপ্তম থেকে নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের টিউটর হতে পারলে। আর এসব বিষয়ে বিসিএস পরীক্ষায় কাজে দেবে। কাউকে পড়াতে হলে তার ওই বিষয়ে ভাসা ভাসা জ্ঞান থাকলেই হয় না, তাকে সে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হয়। এভাবে পড়াতে থাকলে ওই বিষয়গুলোতে নিজের শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়। তবে কোনো অবস্থায়ই অতিরিক্ত টিউশনি করানো উচিত নয়। এতে জীবনের অন্যান্য বিষয়ে ঘাটতি হয়ে যাবে।

এগিয়ে থাকতে সহশিক্ষা কার্যক্রম:বিশ্ববিদ্যালয়জীবনটি শুধু বিসিএস গাইড আর একাডেমিক পড়াশোনা দিয়ে সিজিপিএ নিয়ে খুশি থাকলেই চলবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় মানেই মুক্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার। এখান থেকে বইয়ের জ্ঞানের বাইরেও অনেক কিছু জানার আছে, শেখার আছে।তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন, ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যেতে পারে; যেমন—ডিবেটিং সোসাইটি, ক্যারিয়ার ক্লাব, আবৃত্তি সংসদ, আইটি ক্লাব প্রভৃতি। এসব ক্লাব-সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা একজন মানুষকে স্মার্ট করে তোলে। চাকরিজীবনেও এই দক্ষতা দারুণভাবে কাজে দেয়। বিভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে সহজ হয়। এ ছাড়া এসব সংগঠনের সঙ্গে থাকলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা হাতছানি দেয়। তাই পড়াশোনা ঠিক রেখে বিভিন্ন ধরনের ক্লাব-সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যেতে পারে। কম্পিউটারের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানো যেতে পারে। নিজের ভালো লাগা, শখের কাজ করা যেতে পারে।

বিসিএসই যেন একমাত্র লক্ষ্য না হয়: বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস চাকরি বর্তমান সময়ে অন্যতম আকর্ষণীয় চাকরি। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ধরে নিয়ে, বিসিএসকে ধ্যানজ্ঞান করে পড়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিসিএসকে যারা লক্ষ্য বানায়, তাদের মাত্র ২ শতাংশই এই লক্ষ্য পূরণ করতে পারে। কেননা প্রতিবছর গড়ে দুই হাজার জনকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে নেওয়া হয়। বিসিএস পরীক্ষায় ব্যর্থ হতে হতে অনেক মূল্যবান সময় জীবন থেকে হারিয়ে যায়। হতাশা এসে গ্রাস করে ফেলে। অনেক সুযোগ-সুবিধা হাতের নাগালে থেকেও হাতছাড়া হয়ে যায়।তাই কখনোই বিসিএসকে একমাত্র লক্ষ্য বানানো উচিত নয়। এ প্ল্যান, বি প্ল্যান, সি প্ল্যান তৈরি করে আরো দু-একটি লক্ষ্য রাখা ভালো। প্রথম বর্ষ থেকে নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে, যাতে বিসিএস পরীক্ষায় সফল না হলেও অন্য সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়া যায়। অন্যান্য সরকারি চাকরি, বেসরকারি চাকরি করা যেতে পারে। এ ছাড়া উদ্যোক্তা হয়ে চাকরিপ্রার্থী না হয়ে চাকরিদাতা হওয়া যেতে পারে।

কোনো কিছুতেই ‘অতিরিক্ত’ নয়!: প্রত্যেকটি মানুষের জীবন একটাই। কিন্তু সময় খুবই কম। এই অল্প সময়ে মানুষকে অনেক কিছু করতে হয়, জানতে হয়, শিখতে হয়, উপভোগ করতে হয়। তাই কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। শুধু মুখ বুজে পড়ার টেবিলে থাকলে বাইরের দুনিয়াকে দেখা হবে না। সে জন্য সহশিক্ষা কার্যক্রম, একাডেমিক পড়াশোনা, চাকরির প্রস্তুতি—সব কিছুর মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখতে হবে। মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে দেখতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। অন্যান্য কাজও করতে হবে। সুচিন্তিত পরিকল্পনা করে সব কিছুর ভারসাম্য রেখে চলতে পারলে জীবন সুন্দর ও সহজ হবে।

সূত্রঃ bcsspecialtips

Post Related Things: সরকারি চাকুরি, বেসরকারি চাকুরী, ব্যাংক জব, এন জি ও জব, প্রাইভেট কোম্পানী জব, ডাক্তার জবস, পুলিশ জব, আইনজীবী চাকুরি,সেনাবাহিনী চাকুরী, বিমান বাহিনী চাকুরী, নেভী চাকুরী, এসএসসি পাস চাকুরী, এইচএসসি পাস চাকুরী, ৫ম শ্রেণী পাস চাকুরী, প্রথম আলো চাকুরী, কালের কন্ঠ চাকুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিন চাকুরী, চাকরির খবর, এনটিভি চাকুরি, জাগো জবস, বিডি জবস, আজাদী জবস,

government jobs, govt job, private job, company job, bank jobs, ngo jobs, teacher jobs, education jobs, university jobs, school jobs, chattogram jobs, dhaka jobs, khulna jobs, rajshahi jobs, barishal jobs, rangpur jobs, bdjobs, jagojobsntv jobsprothom alo jobskaler kantho jobsbangladesh pratidin jobsazadi jobs, hsc passed jobs, ssc passed jobs, part time jobs, full time jobs, contractual jobs, foreign jobs, It jobs, army jobsair force jobsnavy jobs, doctor jobs, professor jobs, new job circular 2023, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৩

Leave a Comment