আইইএলটিএস ছাড়াই পড়তে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে মালয়েশিয়ায়

আইইএলটিএস ছাড়াই পড়তে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে মালয়েশিয়ায়

NT-21K 940

২০২৫ সাল নাগাদ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে

প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ পছন্দের গন্তব্য মালয়েশিয়া। 

২০২১ সাল পর্যন্ত  মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ হাজার আবেদন পেয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আকর্ষণীয় স্কলারশিপের সঙ্গে উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান করে। এমনকি আইইএলটিএস ছাড়াও রয়েছে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ রযেছে। তবে আপনি যদি স্কলারশিপ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পড়তে চান তাহলে আইইএলটিএস-এ ভালো স্কোর থাকতে হবে।

যে কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দে মালয়েশিয়া

বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা, ইংরেজি শেখার সুযোগ।

মালয়েশিয়াতে অনেক শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রয়েছে।

যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট স্থানান্তর করা সহজ।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোর্সে অংশ নেওয়ার সুযোগ।

কম খরচে পড়ার সুযোগ এবং সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার ব্যয়।

অতি দ্রুত আবেদন এবং সহজ ভিসা প্রক্রিয়া।

স্নাতক শেষ করার পরে নামী প্রতিষ্ঠানের কাজ করার সুযোগ।

ছুটির দিনে শিক্ষার্থীদের কাজ করার সুযোগ।

সবচেয়ে বড় কথা, মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার খরচ প্রায় বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সমান। তাই সাশ্রয়ী মূল্যে একটি বিদেশী ডিগ্রি আপনাকে বিভিন্নভাবে লাভবান করবে।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মালয়েশিয়ায় পছন্দের কোর্স

 মালয়েশিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে অসংখ্য বিষয়ে পাঠদান করা হয় যেমন,বিজনেস ম্যানেজমেন্ট,ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি,ইঞ্জিনিয়ারিং,মেডিসিন (এমবিবিএস), বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন,মর্ডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কমিউনিকেশন,ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স,হেলথ সায়েন্সেস, চার্টার্ড একাউন্টেন্সি, এগ্রিকালচার, ফরেস্ট্রি, ইসলামিক ষ্টাডিজ, এনভায়রোনমেন্টাল সায়েন্স, ডিজাইন এন্ড আর্কিটেকচার ইত্যাদি।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আপনাকে ব্রাউজ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময়সীমা, প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

মালয়েশিয়ার ডিপ্লোমা, স্নাতক, মাস্টার্স এবং পিএইচডি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম রয়েছে। মালয়েশিয়ায় বছরে তিনটি সেমিস্টার পড়ানো হয়। প্রথম সেমিস্টারটি চলে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। দ্বিতীয় সেমিস্টারটি চলে মে থেকে আগস্ট। আর বছরের তৃতীয়টি বা বছরের শেষটি হল সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর।অন্যান্য অনেক দেশের মতো এই দেশে বসতে হবে না আপনাকে কোনো ভর্তি পরীক্ষায়। কোনো স্কাইপি বা অনলাইন ইন্টারভিউয়েরও প্রয়োজন হয় না ভর্তির সুযোগ পেতে।

শুরুতেই আপনার কাজ হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করা। যদি আপনি সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন তাহলে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হবে আর অনেক সময় লাগবে। অন্যদিকে আপনি যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন, তাহলে অনেক কম সময়ে আর অত্যন্ত দ্রুত গতিতে পেয়ে যাবেন এডমিশন। সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলে, বিশ্ববিদ্যালয় একটি অফার লেটার ইস্যু করে আর সেটা পাঠিয়ে দেয় ইএমজিএসে (এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিস), আর সেখান থেকে ইস্যু করা হয় আপনার অ্যাপ্রুভাল লেটার। এই প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়, ইমিগ্রেশন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সমন্বয় করে। মালায়েশিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ইমিগ্রেশনের সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে পারে না। তাই তারা শিক্ষার্থীদের সকল কাগজ পাঠিয়ে দেয় ইএমজিএসে আর এই ইএমজিএস সকল ডকুমেন্টস ভেরিফাই করে সত্যতা যাচাই করে পাঠিয়ে দেয় ইমিগ্রেশনে। ইমিগ্রেশন একটি অ্যাপ্রুভাল লেটার প্রদান করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সেই অ্যাপ্রুভাল লেটার সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।  

আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১। সকল একাডেমিক সার্টফিকেট এবং মার্কশীট

২। সিভি, মোটিভিশন লেটার ও রিকমেন্ডেশন লেটার

৩। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনপত্র ও আবেদন ফি-প্রদানের ডকুমেন্টস

৪। পাসপোর্টের কপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি

৫। রেফারেন্স লেটার

৬। আইইএলটিএস

৭। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাড়পত্র

টিউশন ফি

মালয়েশিয়ায় টিউশন ফি ৪৫০০ থেকে ২৫,০০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিছু লো র‍্যাঙ্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫০০ থেকে ৭০০০ রিঙ্গিত হয়ে থাকে। তবে মান সম্পন্ন শিক্ষার জন্য আপনাকে বেশি অর্থ গুনতে হবে। ইএমজিএস এর ফি দিতে হবে ১০০০ রিঙ্গিত। মনে রাখবেন এই ফি অফেরতযোগ্য। এছাড়া ইনস্যুরেন্স ফি ৫০০ থেকে ৮৫০ রিঙ্গিত, মেডিকেল ফি ২৫০ রিঙ্গিত দিতে হবে।

এই দেশে কিছু সরকারি ও বেসরকারি স্কলারশিপ আছে। এই সব স্কলারশিপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখতে হবে।  

স্কলারশিপ

মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য নানা ধরনের স্কলারশিপের ব্যবস্থা আছে। তবে স্কলারশিপ লাভের জন্য খুব ভালো একাডেমিক রেজাল্ট থাকতে হয়। এবং ইংরেজিতে ভালো দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়। খারাপ রেজাল্ট নিয়ে স্কলারশিপের জন্য শুধু শুধু প্রচেষ্টা করে লাভ নেই। তবে ফুল স্কলারশিপ না পেলেও আংশিক স্কলারশিপের সুযোগ আছে। নিচে মালয়েশিয়ায় পড়ালেখার জন্য যে সকল প্রতিষ্ঠান বৃত্তি দিয়ে থাকে তার একটি তালিকা দেওয়া হল-

•    মালয়েশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল বৃত্তি: (Malaysian International Scholarship (MIS) ওয়েব সাইট: biasiswa.mohe.gov.my/INT/

•    কমোনওয়েলথ শিক্ষা বৃত্তি

•    বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড

আর্থিক স্বচ্ছলতা

আপনাকে ভিসা আবেদনের সময় আপনাকে ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হবে। আর মালয়েশিয়ায় এক বছরের থাকা খাওয়া ও টিউশন ফি-এর বাবদ যত অর্থ প্রয়োজন সেটা ব্যাংকে গচ্ছিত দেখাতে হবে।  

ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ও ডকুমেন্টস চেকলিস্ট

মালয়েশিয়ায় ভিসা আবেদনের জন্য আপনাকে ঢাকায় অবস্থিত মালয়েশিয়ার এম্বেসীতে যোগাযোগ করতে হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করে ভিসার আবেদন করতে হবে। ভিসা আবেদনের জন্য মূখ্যত প্রয়োজন পড়বে ইএমজিএস থেকে প্রাপ্ত অ্যাপ্রুভাল লেটার। এই অ্যাপ্রুভাল লেটার ও অন্যান্য ডকুমেন্টস জমা দেওয়ার পর যাচাই বাছাই শেষ হলে আপনাকে ৩ মাসের ভিসা দেওয়া হবে। এরপর মালয়েশিয়ায় যাবার পর রেজিস্ট্রেশন ও মেডিক্যাল চেক-আপ ও কার্যক্রম শেষ করার পর ১ বছরের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১। পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম

২। পাসপোর্ট ও ফটোগ্রাফ

৩। সিভি, স্টেটমেনট অব পারপাস (এসওপি)  ও রেফারেন্স

৪।সকল মার্কশিট ও সনদ, আইইএলটি্িসে (যদি প্রয়োজন হয়) 

৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাড়পত্র

৬। অ্যাপ্রুভাল লেটার

৭। ব্যাংক সলভেন্সি পেপ্যার

৮। ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট

৯। পুলিশ ক্লিয়ারান্স

১০। হেলথ ইন্স্যুরেন্স

ভিসা পেতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। আরা ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি ৩০ মার্কিন ডলার।

মালয়েশিয়ায় আবাসন ব্যবস্থা

মালয়েশিয়ায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থা। এজন্য আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা আপনার হোস্টেলের ব্যবস্থা করে দিবে।

মোটামুটি ৮-১০ হাজার টাকার ভেতরেই থাকার বিষয়টি সেরে ফেলা যাবে। ভাড়া কেমন হবে তা নির্ভর করছে এলাকা, বাসস্থানের ধরন (স্টুডেন্ট হল, ক্যাম্পাসের বাইরের কোনো এপার্টমেন্ট, একতলা বাড়ি, দোতলা বাড়ি প্রভৃতি), বাসায় থাকা সুবিধাদি, এবং অবশ্যই কতজন মিলে একসঙ্গে থাকছে তার ওপর।

সূত্রঃ dhakatribune

Leave a Comment