চবিতে ছাত্রলীগের ফের অবরোধ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধের ডাক দিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি পুনর্গঠন-বর্ধিত করার দাবিতে অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে।

চবি শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীদের ডাকা এই অবরোধ আজ সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় শুরু হয়।

অবরোধের কারণে বন্ধ রয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বহনকারী বাস। এ ছাড়া আটকে আছে শাটল ট্রেন। এতে স্থগিত হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ক্লাস ও পরীক্ষা।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে কয়েকজন এসে পরিবহন দপ্তরের ফটকে তালা দেন। এ সময় তাঁরা কয়েকটি বাসের চাবিও নিয়ে যান। তাই ক্যাম্পাস থেকে কোনো বাস নগরের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে পারেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চৌধুরী আমির মোহাম্মদ মুছা প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি নিজেও ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি। শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে আসতে না পারলে পরীক্ষা স্থগিত হওয়া স্বাভাবিক।তবে এ বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে বিভাগের সভাপতিরা সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরও পড়ুন

চবি শাখা ছাত্রলীগের ছয়টি উপপক্ষ এই অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। উপপক্ষগুলো হলো ভার্সিটি এক্সপ্রেস, বাংলার মুখ, এপিটাফ, রেড সিগন্যাল, কনকর্ড ও উল্কা। এই উপপক্ষগুলোর নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

একই দাবিতে গত ১০ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন, ৮ সেপ্টেম্বর গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, ৬ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন ও ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন।

ভার্সিটি এক্সপ্রেস উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে কমিটি বর্ধিত করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু শীর্ষ নেতারা আমাদের দাবি আমলে নেননি। তাই আমরা অবরোধের ডাক দিয়েছি। দাবি না মানা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবরোধ চলবে।’

আরও পড়ুন
অবরোধের কারণে বন্ধ রয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বহনকারী বাস
ছবি: প্রথম আলো

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা অবরোধের ডাক দিয়েছেন, তাঁরা অন্য (নাছির) পক্ষের। তাই তিনি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

ইকবালের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তবে তিনি গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, চবি শাখার কমিটি বর্ধিত করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় কমিটির হাতে। বিষয়টি ইতিমধ্যে বিক্ষুব্ধদের জানানো হয়েছে।

কমিটির জন্য বিক্ষোভ-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া দুঃখজনক। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়। শাখা কমিটিতে বিবাহিত-চাকরিজীবী যদি কেউ পদ পেয়ে থাকেন, তাহলে বিক্ষুব্ধরা দপ্তর সেলে বিষয়টি জানাতে পারেন। কিন্তু তাঁরা এমন কিছু করেননি।

আরও পড়ুন

শাটল বন্ধ

নগরের বটতলী থেকে ক্যাম্পাসে দিনে সাতবার আসা-যাওয়া করে শাটল ট্রেন। এই ট্রেনে দৈনিক ১০ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন। কিন্তু অবরোধ ডাকা নেতা-কর্মীরা একটি ট্রেন নগরের ঝাউতলা স্টেশন ও আরেকটি ষোলশহর স্টেশনে আটকে দিয়েছেন।

ষোলশহর রেলস্টেশনের মাস্টার এস এম ফখরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি শাটল আপাতত স্টেশনে আটকে রয়েছে। কখন চলবে, তা বলা যাচ্ছে না।’

গত ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠনটির কেন্দ্রীয় দপ্তর চবি শাখার ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। কমিটি ঘোষণার পরই পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৪টি হলের প্রায় ৩০টি কক্ষ ভাঙচুর করেন।

এদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে দিয়ে অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা নতুন শাখা কমিটি গঠনের দাবি জানান। এই অচল অবস্থা অব্যাহত থাকে ২ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি বিভাগের ১১টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষে আছেন সাবেক সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীরা। আরেকটি পক্ষে আছেন সাবেক সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা।

চবি শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে রয়েছে ১১টি উপপক্ষ। এর মধ্যে বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) মহিবুল হাসানের অনুসারী। বাকি নয়টি উপপক্ষ নাছিরের অনুসারী। তবে এই দুই নেতা বিভিন্ন সময় বলেছেন, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তাঁদের কোনো পক্ষ নেই।