শিক্ষায় যে বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি

শিক্ষায় যে বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি

NT 30K 737

প্রকাশকেরা দাবি করেছেন, বই ছাপানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণের আকাশছোঁয়া দামের কারণে প্রকাশকদের পক্ষে বইয়ের ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই তারা বইয়ের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের কথা হলো কীভাবে বইয়ের দাম শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জরুরি। ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সটবুক বোর্ড (এনসিটিবি) অনুসারে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির জন্য বাংলা, ইংরেজিসহ চারটি বইয়ের স্ক্রিপ্ট চূড়ান্ত হয়েছে, যা একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করার আগে এসব বই ছাপার দরপত্র আহ্বান করবে। কিন্তু সেখানে প্রকাশকেরা চারটি এনসিটিবি বইয়ের মূল্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি করেছিলেন। কিন্তু এনসিটিবি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর কথা চিন্তা করছে। কিন্তু বাস্তবে ১ শতাংশও বাড়ানো ঠিক হবে না। বর্তমানে সরকার অনেক ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন করে যাচ্ছে, সেখানে নতুন করে ব্যয় বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ সরকার নেবে—এ আশা করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও বলব যাতে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ানো না হয়।

করোনার সময় এমনিতে শিক্ষা খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখনো অনেক ঝুঁকির মধ্যে যাচ্ছে শিক্ষা খাত। মহামারি চলাকালে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে এবং ক্ষতি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্য বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি যেভাবে সাধারণ বা শিক্ষিত মানুষের আলোচনায় ছিল বা আছে। কিন্তু সেভাবে শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ার বিষয়টি আমাদের কাছে আলোচনায় আসে না। এভাবে শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়তে থাকলে সরকারের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে নেওয়া নানা পদক্ষেপ এবং চলমান শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে। সরকারের ‘সবার জন্য শিক্ষা’ কর্মসূচিও হুমকিতে পড়তে পারে। শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের খরচের বোঝা বৃদ্ধি পাবে। ফলে নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে পারে। অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা চালাতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। এমনকি অনেক অভিভাবককে তাঁদের সন্তানের পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাই এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন দাম এখন অভিভাবকদের, বিশেষ করে করোনভাইরাসে আক্রান্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং বই পাঠকদের জন্য একটি নতুন ধাক্কা হিসেবে কাজ করবে। এতে পাঠকসংখ্যা কমে যাবে এবং সাহিত্যচর্চা কমে আসবে, যা সাহিত্যজগতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সর্বশেষ ইউনেসকো গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২ অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিক্ষার মোট ব্যয়ের ৭১ শতাংশ পরিবার বহন করে। কিন্তু পরিবার আরও কম ব্যয় করবে। সরকারে শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ওপর চাপ কমে আসে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সত্ত্বেও দেশগুলোয় শিক্ষায় বিনিয়োগ অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে। ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশ শিক্ষা খাতে মোট সরকারি ব্যয়ের ১৫ শতাংশ বা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ শতাংশের কাছাকাছি কোথাও ব্যয় করেনি। তাই আগামী বাজেটে সরকারের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, যা শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পরিবারগুলো শিক্ষার খরচ মেটাতে ঋণ নেয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ১২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় করে এবং ৬ শতাংশ স্কুলের ফি পরিশোধের জন্য ঋণ নেয়। বাংলাদেশে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবার বেসরকারি পলিটেকনিকে পড়াশোনার খরচ মেটাতে ঋণ নেয়, যা টেকসই উন্নয়নের পরিপন্থী হিসেবে কাজ করছে। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সীমিত আয়ের সব অভিভাবক বইয়ের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শিক্ষা উপকরণ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। অভিভাবকেরা এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং বাজারে সব দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যয় কমাতে বাধ্য হবেন। আমরা আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ, কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে এবং অভিভাবকদের জন্য বইয়ের দাম সহনীয় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

নোটবুক, বই, কলম, পেনসিল, ক্যালকুলেটর ও জ্যামিতি বাক্স সরবরাহের জন্য যে অর্থ অতীতে প্রদান করতে হয়েছে, এখন তার চেয়ে ৩০ শতাংশ বা তার বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি। তাই মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি উভয়ই কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে বা অর্থনীতির জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।

সর্বোপরি, সবকিছু বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি ও শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করা উচিত। অন্যথায়, যে উদ্দেশ্যে উপবৃত্তির প্রচলন হয়েছিল, তার কার্যকারিতা থাকবে না। উপবৃত্তি যেমন আমাদের শিক্ষা খাতের কার্যক্রমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যাতে আমরা আশান্বিত হয়েছি। তাই এ ধরনের আরও নতুন নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে শিক্ষা খাতের ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়।

*লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।

সূত্রঃ prothomalo

Post Related Things: সরকারি চাকুরি, বেসরকারি চাকুরী, ব্যাংক জব, এন জি ও জব, প্রাইভেট কোম্পানী জব, ডাক্তার জবস, পুলিশ জব, আইনজীবী চাকুরি,সেনাবাহিনী চাকুরী, বিমান বাহিনী চাকুরী, নেভী চাকুরী, এসএসসি পাস চাকুরী, এইচএসসি পাস চাকুরী, ৫ম শ্রেণী পাস চাকুরী, প্রথম আলো চাকুরী, কালের কন্ঠ চাকুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিন চাকুরী, চাকরির খবর, এনটিভি চাকুরি, জাগো জবস, বিডি জবস, আজাদী জবস,

government jobs, govt job, private job, company job, bank jobs, ngo jobs, teacher jobs, education jobs, university jobs, school jobs, chattogram jobs, dhaka jobs, khulna jobs, rajshahi jobs, barishal jobs, rangpur jobs, bdjobs, jagojobsntv jobsprothom alo jobskaler kantho jobsbangladesh pratidin jobsazadi jobs, hsc passed jobs, ssc passed jobs, part time jobs, full time jobs, contractual jobs, foreign jobs, It jobs, army jobsair force jobsnavy jobs, doctor jobs, professor jobs, new job circular 2023, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৩

Leave a Comment