শিক্ষার্থীরা কি শিখন-ঘাটতি নিয়ে পরের ক্লাসে উঠবে

শিক্ষার্থীরা কি শিখন-ঘাটতি নিয়ে পরের ক্লাসে উঠবে

SA23k 686

প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী শিখন-ঘাটতি নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উঠছে। ব্যাপারটি গুরুতর ও আতঙ্কজনক। কারণ, আগের ক্লাসের শিখন-ঘাটতির কারণে তারা নতুন শ্রেণির পাঠ ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা না বুঝে গলাধঃকরণ করছে এবং পরীক্ষার খাতায় তা উগরে দিয়ে আসছে।

প্রশ্ন ও মূল্যায়নপদ্ধতির গতানুগতিক ধারায় ত্রুটি থাকায় শিক্ষার্থীদের এ সমস্যা টের পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ প্রশ্ন ও মূল্যায়নের প্রধান কাজ ছিল শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতি শনাক্ত করা। শিখন-ঘাটতি বা পাঠ-দুর্বলতা শনাক্ত করা সম্ভব হলে সে অনুযায়ী প্রতিকারমূলকব্যবস্থা নেওয়াও সহজ ছিল।

কিন্তু আমাদের শিক্ষাপদ্ধতিতে পরীক্ষার সঙ্গে ফলাফলের সংযোগটাই মুখ্য হয়ে রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফলের আশায় নোট মুখস্থের প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। অভিভাবকেরাও মনে করছেন, ভালো শিক্ষকের লিখে দেওয়া উত্তর মুখস্থ করতে পারলে ভালো নম্বর পাওয়া যাবে।

করোনার কারণে প্রায় দুই বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। এ সময়ে স্বাভাবিক শিক্ষা-কার্যক্রম অনিয়মিত হয়ে পড়ে। করোনার পর থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতির ব্যাপারটি প্রকট হয়ে ধরা পড়ছে। যেমন ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত বই থেকে বীজগণিত শুরু হচ্ছে।

কিন্তু যে শিক্ষার্থী ২০২০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ২০২১ সালে সপ্তম শ্রেণিতে ক্লাস করতে পারেনি, সে ২০২২ সালে অষ্টম শ্রেণিতে উঠে বীজগণিতের সমস্যা সমাধানে হিমশিম খাচ্ছে। গণিতের মতো অন্যান্য বিষয়েও সব শিক্ষার্থীকে এ রকম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পূর্বজ্ঞানের ঘাটতির কারণে নতুন শ্রেণির পাঠ সে ধরতে পারছে না। এ সুযোগে শিক্ষকেরাও তাঁদের কোচিং-বাণিজ্যকে সমস্যার সমাধান হিসেবে ব্যবহার করছেন।

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, শিখন-ঘাটতির ব্যাপারটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় মোটেই বিবেচনায় নিচ্ছে না। তারা মনে করছে, স্কুল বন্ধের সময়ে যেসব অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেওয়া হয়েছে, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওই শ্রেণির জ্ঞান ও যোগ্যতা অর্জিত হয়েছে। যোগ্যতার কোনো রকম মূল্যায়ন ছাড়াই তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। অথচ অ্যাসাইনমেন্টের নামে আসলে যে কী হয়েছে, তা শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবারই জানা। ইউটিউব থেকে দেখে কিংবা ফটোকপি দোকান থেকে কিনে শিক্ষার্থীরা কাগজে উত্তর লিখে জমা দিয়েছে শুধু।

এর মাধ্যমে বইয়ের সাধারণ জ্ঞানটুকুও তারা অর্জন করতে পারেনি। তা ছাড়া বিটিভিতে প্রচারিত ক্লাসগুলোতেও সব শিক্ষার্থী নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে পারেনি। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে কিছু ক্লাস হলেও তা পুরো দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতি শনাক্ত করা এবং তা পূরণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, সব শিক্ষার্থীর শিখন-ঘাটতি সমান নয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিখন-ঘাটতি আলাদাভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব না হলে প্রত্যেককেই নতুন পাঠের বিভিন্ন জায়গায় সমস্যায় পড়তে হবে। এভাবে পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে তার দুর্বলতা আরও বাড়তে থাকবে। এই অবস্থা থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে আনার পদ্ধতিও খুব জটিল নয়। সহজ রুব্রিক্স বা মূল্যায়ন-ছক তৈরির মাধ্যমে সহজেই শিক্ষার্থীর সমস্যা বা দুর্বলতা চিহ্নিত করা সম্ভব এবং এ অনুযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো প্রধান বিষয়গুলোর জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা বা লক্ষ্য আগে ঠিক করে নিতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে গণিত বিষয়টিকে ধরে মূল্যায়ন-ছকের ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করা যাক। ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত বইয়ে মোট আটটি অধ্যায় আছে। এসব অধ্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অঙ্ক রয়েছে। দরকারি নিয়মগুলো থেকে একটি-দুটি করে অঙ্কের নমুনা দিয়ে একটি ‘গণিত দুর্বলতা যাচাইকরণ ছক’ বানানো যায়। বানানো ছকটি ব্যবহার করা হবে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য।

সপ্তম শ্রেণির বইয়ের কোনো একটি অধ্যায় শুরু করার আগে শিক্ষক এই যাচাইকরণ ছক থেকে শিক্ষার্থীদের অঙ্ক করতে দেবেন। যে ধরনের অঙ্কে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর দুর্বলতা তিনি লক্ষ করবেন, সেগুলো তিনি ক্লাসে বুঝিয়ে দেবেন। আর কোনো জায়গায় অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর সমস্যা থাকলে তিনি তাদের পারস্পরিক আলোaচনার সুযোগ রাখবেন।

 

সূএ :  প্রথম আলো     

 

Leave a Comment