যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে প্রতীক্ষা বাড়ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের

যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে প্রতীক্ষা বাড়ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের

NT-21K 464

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মানসিক চাপে ভুগছেন

আগস্টের মাঝামাঝি ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দূতাবাসে ব্যাকলগের কারণে অ্যাপয়েন্টমেন্ট শেষ না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যার ফলে উদ্বিগ্নতায় ভুগছেন এসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর “ফল সেশনের” জন্য ৮ মাস আগে আবেদন করেছিলেন। তখন শিক্ষার্থীদের আবেদনের চাহিদা বেশি থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস চাহিদা অনুযায়ী ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের স্লট খুলতে পারেনি।

ইউএস মিশন জানায়, প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে ভিসার অনুমোদন বর্তমানে মুলতবি রয়েছে। এ কারণে ভিসার জন্য সরাসরি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে।

আবেদনকারীদের মধ্যে অনেকেই বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করেছে। যথাসময়ে ক্লাসে যোগ দিতে ব্যর্থ হলে তাদের ভর্তি, বৃত্তি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপে ভুগছে।

হতাশার বিষয়

রেনসেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পারমাণবিক প্রকৌশলের (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং) ওপর পিএইচডি করার জন্য সুযোগ পেয়েছে মামুন (ছদ্মনাম)। আগস্টের শেষদিক থেকে তার ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে তার ভিসার আবেদন ২৫ দিন ধরে মুলতবি রয়েছে।

গত মার্চে তিনি ইন্টারভিউর জন্য আবেদন করেছিলেন এবং ৫ জুলাই তাতে অংশ নেন। আপাতত তার অপেক্ষা ভিসার অনুমোদন নিয়ে।

এ প্রসঙ্গে তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আগামী ১৫ আগস্ট আমার ওরিয়েন্টেশন এবং ২৯ আগস্ট থেকে ক্লাস শুরু। নির্ধারিত সময়ে ক্লাসে যোগ দিতে না পারলে আমার বৃত্তি বাতিল হয়ে যাবে। প্রতিটি দিন এখন দুঃস্বপ্নের মতো কাটছে।”

শাহেদ (ছদ্মনাম) ভার্জিনিয়া টেক নামের একটি পাবলিক ল্যান্ড-গ্রান্ট রিসার্চ ইউনিভার্সিটি থেকে রিসার্চ ম্যানেজমেন্টের ওপর  পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তার ভিসার আবেদন এখন ৪০ দিনের জন্য মুলতবি রয়েছে।

হতাশ এ শিক্ষার্থী বলেন, “২৪ জুনের ইন্টারভিউয়ের পর তারা আমাকে ৮টি অতিরিক্ত প্রশ্নসহ একটি ই-মেইল পাঠিয়েছিল এবং আমি তৎক্ষণাত উত্তর দিয়েছিলাম। এখন তারা আমার আবেদন মুলতবি রেখেছে।” 

তিনি আরও বলেন, “আগামী ১৫ আগস্ট আমার ওরিয়েন্টেশন এবং ২২ আগস্ট থেকে ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। আমি সেমিস্টার পিছিয়ে দিতে পারি, কিন্তু আমার বৃত্তির কী হবে? পুনরায় আমার বৃত্তি পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। ভিসা দিতে দূতাবাসের বিলম্বের কারণে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ভেস্তে যাবে।”

আরও চার শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে ঢাকা ট্রিবিউন জানতে পারে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসে ব্যাকলগের কারণে এখনও প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী তাদের ভিসার জন্য অপেক্ষায় রয়েচে।

শিগগিরই ব্যাকলগ দূর হবে বলে আশাবাদী মার্কিন দূতাবাস

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা জানান, তারা নিয়মিত কনস্যুলার পরিষেবা পুনরায় চালু করেছেন। স্টুডেন্ট ভিসার ব্যাপক চাহিদা মেটাতে এবং যত বেশি সম্ভব শিক্ষার্থীদের ইন্টারভিউ নিশ্চিত করতেও বিশেষ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র জেফ রিডেনর ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় সম্ভাব্য বিলম্ব এড়াতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভিসা ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে উৎসাহিত করছি।”

স্টুডেন্ট ভিসার ব্যাপক চাহিদা মেটাতে দূতাবাস একটি প্রচারণা চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই বিশেষ প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত শুক্রবার দিনগুলোতে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া।”

জেফ রিডেনর আরও বলেন, “আমরা বুঝতে পারি যে আবেদনকারীদের সময়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে আমরা যত দ্রুত সম্ভব প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করি।”

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য কনস্যুলার অফিসারের আরও তথ্যের প্রয়োজন হতে পারে এবং আবেদনকারীকে ই-মেইলের মাধ্যমে পূরণ এবং জমা দেওয়ার জন্য একটি প্রশ্নপত্র দেবে। আবেদনকারী যত দ্রুত প্রশ্নপত্রের উত্তর জমা দেবেন, তত তাড়াতাড়ি আবেদনের বিষয়ে অফিসার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

সূত্রঃ DTB

Leave a Comment